10-Aug-2017 698
ট্রাম্পের মিথ্যার শেষ নেই
Published On : 05-Aug-2017 373 প্রকাশক : Md Shariful Islam
এখনো সপ্তাহ শেষ হয়নি, অথচ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আধ ডজন মিথ্যা বলে বসে আছেন।
সোমবার, সপ্তাহের প্রথম দিন ট্রাম্প জানালেন সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি বৃদ্ধি পাওয়ায় মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট টেলিফোনে তাঁর অভিবাসন নীতির প্রশংসা করেছেন। ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর মেক্সিকো জানাল, সাম্প্রতিক সময়ে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে টেলিফোনে আদৌ কোনো কথাবার্তা হয়নি। এভাবে হাতেনাতে ধরা পড়ে বুধবার হোয়াইট হাউস স্বীকার করল, না, ঠিক টেলিফোনে নয়, কয়েক সপ্তাহ আগে জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের ফাঁকে তাঁদের এ বিষয়ে কথা হয়।
ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, গত নির্বাচনের আগে এক রুশ আইনজীবীর সঙ্গে ট্রাম্প জুনিয়রের গোপন বৈঠকের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। ট্রাম্পের আইনজীবীও এর সাফাই গেয়েছিলেন। মঙ্গলবার ওয়াশিংটন পোস্ট–এর খবরে জানা গেল, এ ব্যাপারে ডন জুনিয়র সত্য গোপন করে যে বক্তব্য গণমাধ্যমের কাছে পাঠান, ট্রাম্প নিজেই তা ডিকটেশন দিয়েছেন বা মুখে মুখে বলে দিয়েছেন। কোনটা সত্যি, এই প্রশ্ন করা হলে হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়, ঠিক ‘ডিকটেশন’ দেওয়া নয়, তবে উদ্বিগ্ন পিতা হিসেবে প্রেসিডেন্ট এ নিয়ে তাঁর অভিমত জানিয়েছিলেন।
আগের সপ্তাহে ভার্জিনিয়ায় বয় স্কাউটদের এক সমাবেশে রাজনৈতিক বক্তৃতা দেওয়ায় ট্রাম্প বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হয়েছিলেন। এমনকি বয় স্কাউট এক বিবৃতিতে সংগঠনকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করায় প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। কিন্তু ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেন, বয় স্কাউটদের প্রধান ফোনে তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁর সে ভাষণ ছিল ইতিহাসেসেরা। মঙ্গলবার ট্রাম্পের পুরো সাক্ষাৎকার পড়ে সংগঠনের একজন মুখপাত্র জানান, এ রকম কোনো টেলিফোন তাঁরা কেউ করেননি। এবারও হাতেনাতে ধরা পড়ে হোয়াইট হাউস জানাল, টেলিফোনে নয়, তবে মুখে মুখে অনেকে সে বক্তৃতার প্রশংসা করেছে।
এভাবে একের পর এক মিথ্যা বলায় প্রেসিডেন্টের কথার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম তো সরাসরি ট্রাম্পকে মিথ্যাচারের জন্য অভিযুক্ত করেছেন। এনবিসি টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে গ্রাহাম বলেন, শুধু নিজের জন্য নয়, ছেলেকে মিথ্যা বলতে সাহায্য করে তাঁর জন্যও বিপদ ডেকে এনেছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের গোপন আঁতাত নিয়ে যে তদন্ত চলছে, এর ফলে তারা নতুন রসদ পাবে। ট্রাম্পের এই অব্যাহত মিথ্যাচার ও বিচার–প্রক্রিয়ায় বাধাদানের চেষ্টা দেখে রক্ষণশীল ভাষ্যকার রবার্ট স্যামুয়েলসন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় মন্তব্য করেছেন, সব দেখেশুনে মনে হয় ট্রাম্প নিজেই বলছেন, ‘আমাকে ইমপিচ করো।’
প্রেসিডেন্টের মিথ্যাচার ও অযোগ্যতার কারণে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি অসন্তোষ বাড়ছে, তাঁর ব্যাপারে ভীতি কমে আসছে। ট্রাম্পের আপত্তির পরও কংগ্রেস বিপুল ভোটে রাশিয়ার ওপর সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রেসিডেন্ট দাবি করেছিলেন, সিনেটের ভোটে ব্যর্থতা সত্ত্বেও রিপাবলিকান সিনেটরদের উচিত হবে পুনরায় স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে কাজ করা। রিপাবলিকান সিনেটররা সে হুমকি অগ্রাহ্য করে ভিন্ন বিষয় মনোনিবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রিপাবলিকান পার্টির ওপর ট্রাম্পের সাঁড়াশি কামড় যে শিথিল হয়ে আসছে, তার আরেক প্রমাণ অ্যারিজোনা থেকে নির্বাচিত রক্ষণশীল সিনেটর জেফ ফ্লেক। একজন রক্ষণশীলের বিবেক নামে সদ্য প্রকাশিত এক বইতে তিনি ট্রাম্পকে ‘ধোঁকাবাজ’ ও ‘নকল রক্ষণশীল’ নামে অভিহিত করেছেন। ফ্লেকের মতে, যে অর্থনৈতিক মূল্যবোধ ট্রাম্প প্রচার করছেন, তার ফলে আমেরিকা ও বিশ্বের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। ট্রাম্পকে বারবার টুইট করার বদলে দেশ শাসনে মন দিতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
নিজ দল থেকে চাপের মুখে আছেন বুঝতে পেরে ট্রাম্প এখন চেষ্টায় আছেন নিজ সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়াতে। গত সপ্তাহে সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই ট্রান্সজেন্ডার বা লিঙ্গান্তরিত ব্যক্তিদের সামরিক বাহিনীতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শ্বেতকায়দের ভর্তির ব্যাপারে বৈষম্য হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী আগমন ৫০ শতাংশ কমানোর এক প্রস্তাবও তিনি জোরেশোরে সমর্থন করেছেন। প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হলে বর্তমান অভিবাসন আইনের বদলে যে ‘পয়েন্টভিত্তিক’ ব্যবস্থা চালু হবে, তাতে শুধু শিক্ষিত ও আর্থিকভাবে অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর ফলে দক্ষিণ আমেরিকা ও অন্যান্য ইংরেজিভাষী নয়, এমন দেশের নাগরিকদের প্রতি বৈষম্য করা হবে, এই যুক্তিতে রিপাবলিকান দলের ভেতরেই প্রস্তাবটির বিরোধিতা এসেছে।
তবে সর্বশেষ জাতীয় জনমত জরিপ থেকে স্পষ্ট ট্রাম্পের যোগ্যতা নিয়ে তাঁর সমর্থকদের মধ্যেও সন্দেহ জাগছে। বুধবার কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের জাতীয় জনমত জরিপ জানিয়েছে, ট্রাম্পকে সমর্থন করে এমন মার্কিনদের হার মাত্র ৩৩ শতাংশ। তাঁর বিরোধিতাকারীদের হার ৫৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ছয় মাস পর কোনো প্রেসিডেন্টের প্রতি এটাই সবচেয়ে কম সমর্থন। এই জরিপের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো রিপাবলিকানদের মধ্যেও ট্রাম্পের সমর্থন ৮৪ শতাংশ থেকে কমে ৭৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।