10-Aug-2017 696
কে এই 'জঙ্গি' আবদুল্লাহ?
Published On : 10-Aug-2017 591 প্রকাশক : Nabid Kauser Moon
২০১১ সালে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে মাত্র ৯ হাজার রুপির বিনিময়েই ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে ফেলে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিম(এবিটি)’এর সক্রিয় সদস্য সন্দেহে ভারতে আটক আবদুল্লাহ আল মামুন। এছাড়া ভারতে যাওয়া জঙ্গিদের পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র বানিয়ে দিতো সে।
আবদুল্লাহকে জেরা করে এই তথ্য পেয়েছে উত্তরপ্রদেশে সন্ত্রাস দমন শাখার (এটিএস) পুলিশ।
গত রবিবার সকালে উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগর জেলার কুতেসরা এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সন্দেহে বাংলাদেশের ময়মনসিংয়ের বাসিন্দা আবদুল্লাহকে আটক করে এটিএস। এরপর ট্রানজিট রিমান্ডে লখনউয়ে নিয়ে আসা হয় আবদুল্লাকে। মঙ্গলবার তাকে তোলা হয় লখনউয়ের বিশেষ মুখ্য বিচারবিভাগীয় হাকিম ছবি আস্থানা’র এজলাসে। বিচারক তাকে পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেয়।
নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর থেকেই তাকে দফায় দফায় জেরা চালাচ্ছে এটিএস। জেরায় একাধিক তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের হাতে। জেরায় সে জানিয়েছে ২০১১ সালে ত্রিপুরা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে চলে যায় উত্তরপ্রদেশের সাহরানপুরের দেওবান্দ এলাকায়। দীর্ঘ সাত বছর ওই ঠিকানায় থাকার পর গত মাসেই ঠিকানা বদল করে আবদুল্লাহ। পুলিশের দাবি আবদুল্লা ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে আধার কার্ড ও পাসপোর্ট বানিয়ে ফেলে।
এটিএস’এর উত্তরপ্রদেশ শাখার আইজিপি অসীম অরুণ জানান, ‘ভারতে এসেই সাহারনপুরের এক এজেন্টকে ৯ হাজার রুপি দিয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট জোগাড় করে ফেলে আবদুল্লাহ। আমরা এখন ওই এজেন্টকেই খুঁজছি’।
আবদুল্লাকে জেরা করে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে পুলিশের কাছে। জানা গেছে, আবদুল্লার মতো অনেকেই বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে। পড়াশোনার নাম করে তারা ভারতে ঢুকেই রঙ বদলে ফেলে এবং এজেন্টের মাধ্যমে ভারতে থাকার পরিচয়পত্রও জোগাড় করে ফেলে তারা।
অসীম অরুণ জানান, ‘জেরায় আবদুল্লা জানিয়েছে যে বাংলাদেশ থেকে একাধিক ব্যক্তি পড়াশোনার অজুহাত দেখিয়ে ত্রিপুরা, অসম এবং পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর এজেন্ট বা দালালের সহায়তায় ভারতীয় পরিচয়পত্র বের করে’। বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা জঙ্গিদের ভুয়া পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র বানিয়ে দিতে সাহায্য করতো আবদুল্লাহ। এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় তাদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করাও ছিল আবদুল্লার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
এদিকে, আবদুল্লাকে জেরা করে ফৈজান নামে আরও এক বাংলাদেশি জঙ্গির খোঁজ পেয়েছে এটিএস। আনসারুল্লা বাংলা টিমের সদস্য ফৈজানের পরিকল্পনা ছিল সাহারনপুরের দেওবন্দ এলাকায় অল্পবয়সী যুবকদের মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের নিজেদের জঙ্গি সংগঠনে নিয়োগ করা। জানা গেছে, ফৈজানকে ভারতে থাকার পরিচয়পত্র বানিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল এই আবদুল্লাহই। আবদুল্লাহর মতো দেওবন্দ এলাকাতেই একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো ফৈজান। তার ঘরে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু জেহাদি লিটারেচর, বোমা বানানোর বই, আইএসআইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদি’এর মেনিফেস্টো উদ্ধার করা হয়।
এটিএস’এর কর্মকর্তারা জানান, ফৈজানের ঘর থেকে এমন কিছু নথি পাওয়া গেছে যেটা স্ক্যান করে আমরা জানতে পেরেছি দেওবন্দ এলাকায় কুং ফু শেখানোর একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। এছাড়াও মার্শাল আট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের বিতরণের জন্য বেশকিছু নামবিহীন পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ওই পরিচয়পত্রে ‘শোয়ালিন টাইগার কুং ফু ক্লাব’-এর নামও উল্লেখিত রয়েছে। তবে আবদুল্লাহকে আটক করা গেলেও অল্পের জন্য পুলিশের হাত থেকে পালায় ফৈজান।